Thursday, February 13, 2014

প্রোগ্রামিং

আজকের এই একুশ শতকের পৃথিবীতে বিজ্ঞান আমাদের যেখানে শত শত উপহার দিয়ে  আমাদের জীবনকে আরও রঙিন করে তুলছে সেখানে আমরা প্রোগ্রামিং শব্দটার কাছে অনেকেই অপরিচিত। তাই লেখাটি প্রোগ্রামিং  নিয়ে যাদের কোনো ধারণা নেই বা খুব সামান্য ধারণা আছে তাদের আগ্রহী করে তোলার ছোট্ট একটি প্রচেষ্টা সরূপ

যদিও মনে করা হয় কম্পিউটার একটি অসম্ভব ক্ষমতাবান কিন্তু আসলে  নির্বোধ একটি যন্ত্র। একটি যন্ত্র ৫০ জন সাধারণ মানুষের কাজ একাই করতে পারে কিন্তু ৫০টি যন্ত্র একটি অসাধারণ মানুষের কাজ করতে পারেনা প্রোগ্রামিং শিখে আমরা একেকজন হয়ে উঠতে পারি সেই মানুষটি যে এই যন্ত্রকে ইচ্ছামত কথা শোনাতে পারে। আপনি যা বলবেন কম্পিউটার তাই করবে, এটাই হলো সোজা কথায় প্রোগ্রামিং।

হয়তো বলতে পারেএখনইতো কম্পিউটার সেটা করে, আমি গান শুনাতে বললে সে শুনিয়ে দেয়, আমি গেম খেলতে চাইলে সে আমার সাথে খেলতে শুরু করে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হলো একজন প্রোগ্রামার আগেই কম্পিউটারকে বলে রেখেছে যে আপনি গান শুনতে চাইলে সে যেন শুনিয়ে দেয়। সে যদি বলে রাখতো গেম খেলতে চাইলে পড়তে বসার উপদেশ দিতে তাহলে কম্পিউটার তাই করতো, আপনার কিছু করার থাকতোনা। প্রোগ্রামার হলো সে যার কথায় কম্পিউটার উঠা-বসা করে। দারুণ একটা ব্যাপার এটা, তাইনা?

কিন্তু আপনি কেন প্রোগ্রামিং শিখবেন? বড় বড় কথা বলার আগে সবথেকে প্রথম কারণ আমি বলবো কারণপ্রোগ্রামিং দারুণ মজার একটি জিনিস!” কম্পিউটারের সাথে অন্য যন্ত্রের বড় পার্থক্য হলো এটা দিয়ে কতরকমের কাজ করানো যায় তার সীমা নেই বললে খুব একটা ভুল হবেনা। তাই প্রোগ্রামিং জানলে যে কতকিছু করা যায় তার তালিকা করতে বসলে শেষ করা কঠিন। আপনি দিনের পর দিন প্রোগ্রামিং করেও দেখবে জিনিসটা বিরক্তিকর  হচ্ছেনা, প্রায় প্রতিদিনই নতুন মজার কিছু শিখছে, নতুন নতুন টেকনোলজী আবিষ্কারের সাথে সাথে  আরো অনেক রকম কাজ করতে পারছে অথবা নিজেই করছেন নতুন নতুন আবিষ্কার! আজ হয়তো জটিল কোনো সমীকরণ সমাধান করার জন্য ফাংশন লিখছে, কাল এসব ভালো লাগছেনা বলে লাল-নীল রঙ দিয়ে একটি অ্যানিমেশন বানাতে বসে গেলে, আপনার সৃষ্টিশীলতার সবটুকুই কাজে লাগাতে পারেন প্রোগ্রামিং এর জগতে। যে জীবনে প্রোগ্রামিং শিখলোনা সে যে কি মিস করলো কখনোই কল্পনা করতে পারবেনা

একটি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে কম্পিউটার বা মোবাইল দিয়ে কি করে? রাশিয়া-চীনের ছেলেমেয়েরা অনেকেই হয়তো অ্যাসেম্বলিতে কোড লিখে, কিন্তু জরিপ না করেও বলা যায় আমাদের দেশে বেশিভাগই  ফেসবুক , গেমস ছাড়া খুব বেশি কিছু করেনা। আসলে কম্পিউটার দিয়ে কি করা যায় তার ধারণাও অনেকের নাই। ছেলে বা মেয়েটিকে প্রোগ্রামিং শিখিয়ে দেয়া হলে তখন তার জগৎটাই পাল্টে যাবে। সে তখন সারাদিন গেমস না খেলে হয়তো একটি গেমস বানিয়ে ফেলবেএ।আবার কম্পিউটারের জগতে অসাধারণ কিছু অগ্রগতি হয়েছে খুব কম বয়েসী প্রোগ্রামারদের দিয়ে, যেমন বিল গেটস স্কুলে থাকতেই চমকে দেয়ার মত কিছু প্রোগ্রাম লিখেছিলেন। ঠিক তেমনি প্রোগ্রামিং কনটেস্টে হাইরেটেড কোডারদের অনেকেই স্কুল-কলেজ এখনও শেষ করেনি

আর প্রোগ্রামিং করা মানে আনন্দের সাথে শেখা এই শেখাটা খালি কম্পিউটারের মধ্য সীমাবদ্ধ না, অধিকাংশ ভালো প্রোগ্রামারদের খুবই ভালো গাণিতিক এবং লজিকাল জ্ঞান থাকে। দাবা খেলার মতোই প্রোগ্রামিং পুরোটাই লজিকের খেলা, কোন কাজের পর কোনটা করলে কি হবে, কিভাবে করলে আরো দ্রুত ফলাফল আসবে এইসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে মস্তিষ্কের লজিকাল সেক্টরটা ডেভেলপ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে চিন্তা করার মত আনন্দের এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর নেই।
 
প্রোগ্রামিং শেখা কি খুব কঠিন? উত্তর হলো হ্যা,যদি আপনার আগ্রহ না থাকে এবং কেও আপনাকে জোর করে শেখায়। যদি একবার মজা পেয়ে যান তাহলে এরপর কারো শেখানো লাগবেনা, নিজেই সব শিখে ফেলতে পারেন যদি একবার ভালো লাগে বাজী ধরে বলতে পারি কোড লিখতে লিখতে প্রায়ই খাবার কথাও ভুলে জাবেন।যেকোন কাজের জন্যই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ভালো লাগা, যেটা ভালো লাগেনা সেটা করার কোনো অর্থ দেখিনা কারণ দুইদিন পর যা শিখসি সব ভুলে যাবো

আনন্দের জন্য প্রোগ্রামিং শিখলেও এটা আপনার ক্যারিয়ারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোগ্রামিং জানার আরেকটি দারুণ ব্যাপার হলো আপনি ভালো কোনো কাজ করলে খুব সহজেই সারা বিশ্ব জেনে যাবে। পৃথিবীর আরেক প্রান্তের মানুষ আপনার বানানো সফটওয়্যার দিয়ে গান শুনবে, আপনার অপারেটিং সিস্টেম বুট করবে, আবার পিসি হ্যাং করলে হয়তো আপনাকেই গালি দিবে!!  তবে প্রোগ্রামিং শেখার উদ্দেশ্য কখনোই চাকরী বা খ্যাতি অর্জন হওয়া উচিত নয়, শিখবে আনন্দের জন্য, জানার জন্য

এবার আসি প্রোগ্রামিং শিখবো কোথায়? অন্যান্য দেশের মতো যদিও আমাদের সেরকম সুবিধা নেই তারপরও কিছু বই আমাদের সাহায্য করতে পারে যেমন, তামিম শাহরিয়ার ভাইয়ের – এসো প্রোগ্রামিং শিখি বইটি খুবই অসাধারণ। তাছাড়া যাদের বাসায় ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে তারা Shikkhok.com সাইট থেকে তামিম শাহরিয়ার সুবীন ভাইএর ভিডিও Tutorial গুলো দেখতে পারেন যা প্রোগ্রামিং শিখতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে।

আমাদের দেশের সবারই  স্বপ্ন যে আগামিতে কেউ একে অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে মাথা ঘামাবেনা, বরং মাথা ঘামাবে গাণিতিক সমস্যা নিয়ে, পাজল নিয়ে, অ্যালগোরিদম নিয়ে,ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা গেমস খেলার কাজে না লাগিয়ে কাজে লাগাবে পৃথিবীর উন্নয়নে। সেই উদ্দেশে বই পড়া, গণিত চর্চা করার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং শিখা এই সংস্কৃতি শুরু করতে হবে। আপনারা প্রোগ্রামিং জানলে অন্যদেরও শিখতে সাহায্য করে এভাবে পরিবর্তন একসময় আসবেই এবং চিন্তা করার সংস্কৃতি তৈরি হবে
Facebook-Knowledge Foundation